Sundarbans সুন্দরবন কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন?
Sundarbans সুন্দরবন কিভাবে যাবেন

Sundarbans সুন্দরবন কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন?

Sundarbans সুন্দরবন প্রাকৃতির এক অপার বিস্ময়। এটি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি।

বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে এ বন বিস্তৃত।

১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। আর যারা প্রকৃতি পছন্দ করেন তাদের কাছে বেড়ানোর জন্য সব থেকে আদর্শ স্থান হতে পারে এই সুন্দরবন।

যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে।

Sundarbans সুন্দরবন

Sundarbans সুন্দরবন কিভাবে যাবেন

আপনি চাইলে সড়ক ও নদীপথে সুন্দরবন যেতে পারেন। সড়ক পথে– খুলনা খেকে বাসযোগে কয়রা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়। নদী পথে– খুলনা লঞ্চঘাট খেকে লঞ্চযোগে সুন্দরবন যাওয়া যাবে। রাতে ও সকালে লঞ্চ রয়েছে।

ঢাকা থেকে সুন্দরবন যেতে চাইলে সরাসরি বাসে খুলনা যেতে হবে। এছাড়া ট্রেন ও বিমানেও খুলনা যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে খুলনার ট্রেনে উঠে খুলনা শহরে যেতে পারবেন। বিমানে যেতে হলে যশোর নামতে হবে।

যশোর থেকে বাস অথবা গাড়ী ভাড়া করে খুলনা যাওয়া যায়। খুলনা শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে রাতে অবস্থান করে পরের দিন সকালে সুন্দরবন যেতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথম যেতে হবে মংলা।

খুলনা থেকে প্রাইভেট গাড়ি অথবা বাসে মংলা যাওয়া যায়। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চে যেতে হবে সুন্দরবন।

মংলা ঘাট থেকে করমজল যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। সকালে খুলনা থেকে মংলা হয়ে বন ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে আবার খুলনা ফিরে আসা যায়।

এছাড়া খুলনা স্টিমার ঘাট থেকে সকালে সরাসরি সুন্দরবন লঞ্চ ছেড়ে যায়। এগুলো বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির। তাদের কাছ থেকে আগে টিকিট কেটে রাখতে হবে।

সুন্দরবন

সুন্দরবন কি দেখবেন

সুন্দরবনের পুরোটাই বন ও জঙ্গলে ঘেরা। এখানে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী আছে।

যার মধ্যে আছে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

প্রধান সরীসৃপ জাতিগুলোর মধ্যে আছে নোনা পানির কুমির, অজগর, গোখরা, গুইসাপ, সামুদ্রিক সাপ, গিরগিটি, কচ্ছপ এবং অন্যান্য। প্রায় ৩০ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়।

পশুর নদী থেকেই মূলত শুরু হবে যাত্রা, নৌকায় ওঠার পরপরই চোখের সামনে ফুটে উঠবে গাছের সারি। তরতর করে নৌকা এগোবে পশ্চিম দিকে, নৌকার ছাদে বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে।

নৌকা ৪০ মিনিট চলার পর সোজা এসে থামবে করমজলের ঘাটে। করমজল মূলত হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র। করমজলে নেমেই বনে ঢোকার টিকিট কাটতে হবে, জনপ্রতি ২৩ টাকা।

খরচ কেমন

এখানে গেলে আপনাকে মূলত বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানির প্যাকেজের আওতায় যেতে হবে। তাই আপনার খরচ কতো হবে তা আপনি আগেই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারবেন।

কারণ মংলা থেকে জাহাজে ওঠার পর থেকে তিনদিনের টুর শেষে আবার ঘাটে ফেরা পর্যন্ত লঞ্চভাড়া, ফুয়েল, খাবার, নাস্তা, প্রত্যেকের সরকারী পাশ, রেভিনিউ, গাইড, গানম্যান, বনে ঘুরার ছোট নৌকা সহ অন্যান্য সব খরচ ওই প্যাকেজের মধ্যে থাকে।

এখানে খুলনা বা মংলা থেকে সম্ভাব্য খরচ উল্লেখ করা হল।

  • খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি টুরে সাধারনত খরচ পরে ৬০০০-৮০০০ টাকা।
  • একটু ভালোভাবে যেতে চাইলে এর উপরে প্রতিজন ১৯,০০০ টাকা পর্যন্তও প্যাকেজ আছে।
  • আর ছাত্র-ছাত্রীরা খরচ কমাতে ৩৫ থেকে ৪০ জনের দল করে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের ভ্রমন করে আসতে পারবেন।
সুন্দরবন

বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন

এটি একটি অনন্য পরিবেশ ব্যবস্থা এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিস্তৃত, এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। এটি মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতল হরিণ, কুমির এবং অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতির আবাসস্থল।

অবস্থান

  • বাংলাদেশ: খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলায় বিস্তৃত।
  • ভারত: পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায়।
  • মোট আয়তন: প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশে ৬০% এবং ভারতে ৪০%)।

গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

ম্যানগ্রোভ বন:

  • বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।
  • গাছপালার মধ্যে সুন্দরী, গেওয়া, গোলপাতা উল্লেখযোগ্য।

জীববৈচিত্র্য:

  • বন্যপ্রাণী: রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতল হরিণ, বানর, ডলফিন, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং পাখি।
  • জলজ প্রাণী: কুমির, কাঁকড়া, মাছ, এবং শামুক।

প্রাকৃতিক সম্পদ:

  • মধু সংগ্রহ, মাছ ধরা, কাঠ এবং গোলপাতা স্থানীয় জনগণের জীবিকার উৎস।

নদ-নদী ও খাল:

  • গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, এবং মেঘনার মোহনা অঞ্চলের নদী ও খাল জালের মতো বিস্তৃত।

প্রাকৃতিক বাধা:

  • সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং উপকূলীয় ভাঙন থেকে রক্ষা করে।
  • প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:

  • কার্বন শোষণ ও বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ:

  • প্রাণী ও উদ্ভিদের বিরল প্রজাতির আশ্রয়স্থল।

জলবায়ু পরিবর্তন:

  • সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বনাঞ্চল হ্রাস করছে।
    অবৈধ কাঠ কাটা ও শিকার:
  • বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের ক্ষতি।
    দূষণ:
  • তেল ও প্লাস্টিক দূষণ নদী ও পরিবেশ নষ্ট করছে।
    লবণাক্ততা বৃদ্ধি:
  • কৃষি এবং পানির উত্সে প্রভাব ফেলছে।
সুন্দরবন

সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা:

  • বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই সুন্দরবনের কিছু অংশ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
    ইকোট্যুরিজম:
  • পরিবেশ বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা।
    বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ:
  • রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির জন্য বিশেষ প্রকল্প।
    আন্তর্জাতিক সহায়তা:
  • ইউনেস্কো এবং অন্যান্য সংস্থা সুন্দরবনের সুরক্ষায় অবদান রাখছে।

বিখ্যাত পর্যটন স্থান বাংলাদেশে:

  • কটকা
  • করমজল
  • হিরণ পয়েন্ট

বিখ্যাত পর্যটন স্থান ভারতে:

  • সজনেখালি
  • সুদন্যখালি
  • ঝিলমিলি

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ অংশটি এবং ১৯৮৭ সালে ভারতের অংশটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

সংক্ষেপে সুন্দরবন

এটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল, যা মানুষের জীবনধারণ ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আমাদের সবার দায়িত্ব।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post