Sajek Valley সাজেক ভ্যালি কিভাবে যাবেন ? কোথায় থাকবেন? কি খাবেন? সেসব নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবেদন। পাহাড় ভালোবাসেন? মেঘ? তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি । পাহাড় আর মেঘ যেখানে একাকার হয়ে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া।
বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য সাজেক ভ্যালি। চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
সাজেক থেকে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে পাবেন। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ।
খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিলোমিটার।
Sajek Valley সাজেক ভ্যালি কিভাবে যাবেন
আপনি চাইলে রাঙামাটি বা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে পারেন। তবে খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়া আপনার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
খাগড়াছড়ি দিয়ে যেভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বিআরটিসি, সেন্টমার্টিন, শ্যামলি, হানিফ পরিবহনসহ বেশকিছু এসি ও নন এসি বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে করে ভাড়া পড়তে পারে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকার মতো।
এতে করে আপনার সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। বাসগুলো সাধারণত রাত ১০ টার মধ্যে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আর আপনি যদি সরাসরি ঢাকা থেকে দীঘিনালার বাসে চড়তে চান তাও পারেন। শান্তি পরিবহনসহ বেশকয়েকটি বাস এ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করে। ভাড়া পরবে ৫৮০ টাকার মতো।
এরপর খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি বা চাঁন্দের গাড়ি নিয়ে যেতে হবে সাজেক ভ্যালি। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
যাওয়া আসাসহ দুইদিনের জন্যে এ গাড়ি রিজার্ভ নিলে ভাড়া পরবে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
একটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন যেতে পারবেন। তবে লোক কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে।
যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। তবে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভালো।
আপনার ভ্রমণের সুবিধার্থে জীপ সমিতি ও পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যান সমিতি কতৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
খাগড়াছড়ি টু সাজেক চাঁদের গাড়ি ভাড়া
স্থান | যাত্রার ধরণ | ভাড়া |
---|---|---|
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | আসা-যাওয়া | ৫৪০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | ১ রাত্রি যাপন | ৭৭০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | ১ রাত্রি যাপন, আলুটিলা রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ সহ | ৯৭০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | ২ রাত্রি যাপন | ১০,৫০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | ২ রাত্রি যাপন, আলুটিলা রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ সহ | ১২,৫০০ টাকা |
তবে আপনি যদি একা বা কয়েকজন বন্ধু মিলে যেতে চান তাহলে দুশ্চিন্তা নেই। খাগড়াছড়ি শাপলা চত্ত্বর থেকে অনেক গ্রুপ পাওয়া যায়, সেখানে অন্য গ্রুপের সাথে কথা বলে তাদের সাথে শেয়ার করে যেতে পারবেন।
আর তা না পারলে জিপ সমিতির অফিসে গেলে ওরা আপনার জন্য কোন একটি গ্রুপ ঠিক করে দেবেন। তাছাড়া আপনি চাইলে সিএনজি ভাড়া করেও সাজেক যেতে পারেন।
খাগড়াছড়ি টু সাজেক সিএনজি ভাড়া
স্থান | যাত্রার ধরণ | ভাড়া |
---|---|---|
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | শুধু যাওয়া | ২১০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | দিনে দিনে যাওয়া আসা | ৩০০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | এক রাত্রী যাপন | ৩৯০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক | দুই রাত্রী যাপন | ৪৯০০ টাকা |
রাঙামাটি দিয়ে যেভাবে যাবেন?
রাঙামাটি হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে আপনাকে প্রথম ঢাকা থেকে রাঙামাটি যেতে হবে। শ্যামলী, সেন্টমার্টিন, হানিফ, ইউনিক, এস আলমসহ বেশকিছু বাস প্রতিদিন এ রুটে চলাচল করে।
এসব নন এসি বাসের ভাড়া ৬২০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
এরপর রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথ বা সড়কপথে বাঘাইছড়ি যেতে হবে।
রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে। এতে করে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা।
রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ৮ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে বাস ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা।
এছাড়াবাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালি যাওয়া যায়। এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০০ টাকা।
যা অবশ্যই মনে রাখবেন
আপনি যদি খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে চান আপনাকে সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে দিঘীনালায় পৌঁছাতে হবে।
দিঘীনালা থেকে সাজেক ভ্যালি পর্যন্ত যেতে নিরাপত্তার জন্যে আপনাকে সেনাবাহিনীর এসকোর্টে যেতে হবে।
সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে দুইবার পাওয়া যায়। সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে একবার, আবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে।
সকালের এসকোর্ট মিস করলে আপনাকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর বিকেলেরটা মিস করলে আপনাকে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সেনাবাহিনীর এসকোর্ট ছাড়া সাজেক ভ্যালি যাবার অনুমতি পাবেন না।
সাজেক ভ্যালি | কোথায় খাবেন?
সাজেক গেলে খাওয়ার নিয়ে খুব একটা চিন্তা না করলেও চলবে। কারণ এখানে বেশকিছু ভালো মানের খাবার রেষ্টুরেন্ট বা হোটেল আছে।
এদের মধ্যে ফুডানকি রেষ্টুরেন্ট, চিম্বাল রেষ্টুরেন্ট, মারুতি দিদির রেষ্টুরেন্ট, কাশবন রেষ্টুরেন্ট, মনটানার রেষ্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।
ডাল, ভাত, সবজি ও দেশী মুরগী দিয়ে আপনি জনপ্রতি প্যাকেজ খাবার পাবেন। এর দাম পরবে ২০০ টাকা। চাইলে বন্ধুদের নিয়ে বারবিকিউও করতে পারবেন। খরচ পড়বে ২৫০ টাকার মতো।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সাজেকে গেলে আদিবাসীদের ঘরেও খাওয়া যায়। তবে তার জন্য আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি খাবেন, তাহলে রান্না করে দিবে।
সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন। সেখানে গেলে অবশ্যই এগুলো না খেয়ে আসবেন না।
সাজেক ভ্যালি | কোথায় থাকবেন?
সাজেক ভ্যালিতে শ’খানেক রিসোার্ট আছে। এর মধ্যে তিনটি সেনাবাহিনী পরিচালিত। বাকিগুলি বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।
আপনি চাইলে ঢাকা থেকেই এসব রিসোর্ট বুকিং করে যেতে পারবেন। এসব রিসোর্টে আপনি ভালো সুযোগ সুবিধা পাবেন। কোন কোন রেষ্টুরেন্টে খাবার ব্যবস্থাও থাকে। তবে সবগুলোতে থাকে না।
তাই রিসোর্ট বুকিং করার আগে এ ব্যাপারে কথা বলে নেবেন। কিছু উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের নাম ও ফোন নাম্বার এখানে উল্লেখ করা হলো। তবে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
হোটেলের নাম | সম্ভাব্য ভাড়া (প্রতি রুম) | মোবাইল নাম্বার |
---|---|---|
সাজেক রিসোর্ট | ১০,০০০ – ১৫,০০০ টাকা | ০১৮৫৯-০২৫৬৯৪, ০১৮৪৭-০২০৩৯৫ |
রিসোর্ট রুংরাং | ২,০০০-৩,৫০০ টাকা | ০১৮৮৪-৭১০৭২৩, ০১৮৬৯-৬৪৯৮১৭ |
রুন্ময় রিসোর্ট | ৪,০০০-৫,০০০ টাকা | ০১৮৬৫-৪৭৬৮৮ |
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট | ৪,০০০-৪,৫০০ টাকা | ০১৮১৫-৭৬১০৬৫ |
ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট | ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা | ০১৮৮৫-৪২৪২৪২ |
মেঘ মাচাং | ৩,৫০০-৪,৫০০ টাকা | ০১৮২২-১৬৮৮৭৭ |
জুমঘর ইকো রিসোর্ট | ৪০০০ টাকা | ০১৮৮৪-২০৮০৬০ |
লুসাই কটেজ | ২,৫০০-৪,০০০ টাকা | ০১৬৩৪-১৯৮০০৫ |
আলো রিসোর্ট | ১০০০-১৫০০ টাকা | ০১৮৪১-০০০৬৪৫ |
সাজেক ভ্রমণ টিপস
- ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই (মাস খানেক) রুম বুকিং দিয়ে রাখুন।
- যাবার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প আছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়। নিরাপত্তার সার্থে তাদের সহযোগিতা করুন। সাথে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের একাধিক ফটোকপি রাখুন।
- সাজেকে বিদুৎ নেই, সোলার ব্যবস্থা থাকলেও সহজলভ্য নয়। সাথে করে মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিন।
- সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।
- সাজেক যাবার পথ অনেক আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু, তাই এই পথ বিপদজনক। জীপের ছাঁদে ভ্রমন করবেন না।
- সাজেক যেতে গাইডের প্রয়োজন হয় না।