Saint Martin’s Island সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সবথেকে দর্শণীয় স্থান । আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল যেখানে মিলেমিশে একাকার। বালি, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণ পিপাসুমানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র এই সেন্টমার্টিন।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যা মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপকে স্থানীয় ভাষায় নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়।
সবথেকে আনন্দের খবর, এই দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল। তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
তবে যারা দিনে গিয়ে দিনেই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন তারা পরবর্তীতে আফসোস করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় অন্তত একদিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা। এতে যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে। তবে সেন্টমার্টিন ট্যুর ও সেখানে রাত্রিযাপন নিয়ে সরকার সম্প্রতি কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছ। সেন্টমার্টিন ট্যুর চূড়ান্ত করার আগে এ ব্যাপারে ভালো করে জেনে নিন।
নারিকেল, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ধান এই দ্বীপের প্রধান কৃষিজাত পণ্য। আর অধিবাসীদের প্রায় সবারই পেশা মৎস্য শিকার। তবে ইদানীং পর্যটন শিল্পেরবিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপেরমাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে।
Saint Martin’s Island সেন্টমার্টিন দ্বীপ কিভাবে যাবেন?
আসুন এবার জেনে নিই কিভাবে আপনি এই দ্বীপে পৌছাবেন।
- বাংলাদেশের যে কোনও স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার।
- ঢাকা থেকে বাস বা বিমানে করে আপনি সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন। আর ট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে কক্সবাজার।
- এরপর কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ।
- টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আমরা আপনার ট্রলার ভ্রমণে নিষেধ করবো।
প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার বা টেকনাফের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কিছু গাড়ি। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এসব বাসের ভাড়া হতে পারে ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া আপনি যদি সরাসরি ঢাকা থেকে টেকনাফ যেতে চান সে ব্যবস্থাও আছে আপনার জন্য। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এতে করে আপনার সময় লঅগবে ১০-১২ ঘন্টার মতো। ভাড়া হবে সাধারণত ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
আপনি যদি কক্সবাজার পর্যন্ত যান তারপর তারপর টেকনাফ পর্যন্ত বাসে ভাড়া পড়বে ১৪০ টাকা। অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে টেকনাফ যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে চলাচল করে এসব গাড়ি।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন নামের বেশকিছু সি-ট্রাক। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলার ও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে।
জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৫৫০-৮০০ টাকার মত। জাহাজগুলো প্রতিদিন সকাল ৯.০০-৯.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকাল ৩.০০-৩.৩০ মিনিটে।
তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে। আর এমন ক্ষেত্রে ট্রলারে করে ফেরা ছাড়া উপায় নেই যা বিপদজনক। যারা সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করেন তাঁরা পরের দিন একই জাহাজে ফেরার সুযোগ পান। তবে সেটা আগে টিকিট করার সময় বলে নিতে হয়।
যে কথাটা অবশ্যই মনে রাখবেন তা হলো- শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে। তাই বেড়ানোর জন্য এ সময়টাই বেছে নিন। গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে। এ মৌসুমে চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
কি খাবেন?
যদি আপনি জীবনে একটিবারও সেন্টমার্টিন যান! এবং সেখানে একটি জিনিসই খেতে চান! তাহলে অবশ্যই সেটা হবে ডাব। এখানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জিনিস হল ডাব যা একাধারে মিষ্টি ও সুস্বাদু।
আর যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের ও স্বাদের খাবার অপেক্ষা করছে।
আর যদি সুযোগ হয় তবে দেশী মুরগী খেতে পারেন। সেখানে দেশী মুরগীকে কুরা বলা হয়। এখানে আরো রয়েছে অফুরন্ত লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকিসহ অনেক শুঁটকি মাছের ভান্ডার। জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারীতে সেন্টমার্টিন গেলে স্থানীয় তরমুজ পাওয়া যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ, কোথায় থাকবেন?
রাতে থাকার জন্য সেন্টমার্টিনে উন্নতমানের বেশ কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এছাড়াও অনেক বাড়িতে পর্যটকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থা আছে। আর হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্র বিলাসও এখানে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
এখানকার জনপ্রিয় হোটেল ও কটেজের মধ্যে রয়েছে সমুদ্র বিলাস, সীমানা পেরিয়ে, প্রিন্স হেভেন, ব্ল–মেরিন রিসোর্ট, ড্রিম নাইট রিসোর্ট, প্রাসাদ প্যারাডাইস, কোরাল ভিউ, কোরল ব্লু, মারমেইড, সি প্রবাল, নীল দিগন্ত, সায়রী, সি ইন, হোটেল সাগর পাড়, রিয়াদ গেস্ট হাউজ, হোটেল স্বপ্ন প্রবাল, শ্রাবণ বিলাস, ব্লু ল্যাগুণ, সানসেট ভিউ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মেরিন পার্ক ইত্যাদি।
এসব হোটেল বা কটেজে থাকতে হলে প্রতি রাতের জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পর্যটন মৌসুমে এখানকার প্রায় প্রতি বাড়িতে সরাসরি আলাপ করে আবাসিক থাকার সুবিধা পাওয়া যায়।
তবে এসব রুমের ভাড়ার তারতম্য হয়। সাধারণত ২০০-২৫০ টাকা হলে মোটামুটি ভাল রুম নেয়া যায়। আসুন এবার একনজরে কিছু হোটেল ভাড়া জেনে নিই।
হোটেলের নাম | সম্ভাব্য রুম ভাড়া | মোবাইল নাম্বার |
---|---|---|
ব্লু মেরিন রিসোর্ট | ১০০০ টাকা – ১৫০০০ টাকা | ০১৮১৭ – ০৬০০৬৫ |
কোরাল ভিউ রিসোর্ট | ২৫০০ টাকা – ৬০০০ টাকা | ০১৯৮০ – ০০৪৭৭৭, ০১৯৮০ – ০০৪৭৭৮ |
প্রাসাদ প্যারাডাইস | ২০০০ টাকা – ৫০০০ টাকা | ০১৯৯৫ – ৫৩৯২৪৮, ০১৮৮৩ – ৬২৬০০৩ |
নীল দিগন্তে | ১৫০০ টাকা – ৫০০০ টাকা | ০১৭৩০-০৫১০০৪ |
প্রিন্স হেভেন | ১৫০০ টাকা – ৩৫০০ টাকা | ০১৯৯৫ – ৫৩৯২৪৬, ০১৮৮৩ – ৬২৬০০২ |
লাবিবা বিলাস রিসোর্ট | ৩৫০০ টাকা – ১২০০০ টাকা | ০১৭০০ – ৯৬৯২১২, ০১৮৩৪ – ২৬৭৯২২ |
ড্রিম নাইট রিসোর্ট | ১৫০০ টাকা – ৩৫০০ টাকা | ০১৮২৫ – ৬৫৬৩২৬, ০১৭৩০ – ২৩৫০০২ |
সায়রী ইকো রিসোর্ট | ১৫০০ টাকা – ৩০০০ টাকা | ০১৬১০ – ৫৫৫৫০০ |
সীমানা পেরিয়ে | ৭০০ টাকা – ৮০০ টাকা (জন প্রতি) | |
সমুদ্রবিলাস | ৫০০ টাকা – ১০০০ টাকা (জন প্রতি) |
সতর্কবার্তা
- সমুদ্র নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন।
- এক হাঁটু পানির নিচে না নামাই নিরাপদ।
- প্রাপ্ত বয়স্কদের অনুপস্থিতিতে ছোট ছোট বাচ্চা পানিতে নামা নিষেধ।
- সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
- একা একা কখনই পানিতে নামবেন না।
- নৌ যান চলাচল কালে লাইফ জাকেট পরিধান করুন।