বন আর পানির মেলবন্ধন খুঁজছেন? এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে আর ঘরে ফিরতে মন চাইবে না । হ্যা! তাহলে রাতারগুল Ratargul আপনার জন্য সেরা পছন্দ হতে পারে।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। দীর্ঘ এই এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত।
চিরসবুজ এই বন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। বর্ষাকালে এই বন ২০–৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর, পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে।
এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
Ratargul রাতারগুল কিভাবে যাবেন?
রাতারগুল যেতে প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে যেতে হবে সিলেটে। গাবতলী, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা প্রভৃতি পরিবহনের এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা।
আপনি চাইলে ট্রেনে করেও সিলেটে যেতে পারেন। কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এছাড়া বাজেট ভালো থাকলে ফ্লাইটেও খুবই কম সময়ে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে পারেন। তার জন্য আপনার সময় কমে গেলেও খরচ বেড়ে যাবে।
সিলেট থেকে যেভাবে যাবেন?
সিলেট থেকে তিনভাবে আপনি রাতারগুল পৌছতে পারেন। যে পথ আপনার জন্য সহজ হয় সেটিই আপনি ব্যবহার করতে পারেন। নিচে তিনটি পথের বিবরণই দেওয়া হল।
প্রথম পথ
সিলেট থেকে জাফলং – তামাবিল রোডে সারীঘাট হয়ে সরাসরি গোয়াইনঘাট পৌঁছানো। এরপর গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে। ভাড়া ৯০০ – ১৫০০ এর মধ্যে (আসা-যাওয়া)। আর সময় লাগে দুই ঘণ্টা।
বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে, এতে ঘণ্টাপ্রতি লাগবে ২০০-৩০০ টাকা।
দ্বিতীয় পথ
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছানো, ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা। ওসমানী এয়ারপোর্ট–শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে।
ভাড়া ৮০০ – ১৫০০ টাকার মধ্যে (আসা-যাওয়া)। আর সময় লাগে দুই ঘণ্টা। বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে। এতে মাঝি ঘণ্টাপ্রতি নেবে ২০০-৩০০ টাকা।
তৃতীয় পথ
রাতারগুল-সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মোটরঘাট (সাহেব বাজার হয়ে) পৌঁছাতে হবে। ভাড়া নেবে ২০০-৩০০ টাকা আর সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক। এরপর মোটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়, এতে ঘণ্টাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা লাগবে। এই তৃতীয় পথটিতেই সময় ও খরচ সবচেয়ে কম।
মনে রাখা জরুরী, যে পথেই রাতারগুল আসেন না কেন বনের ভেতরে ঢুকতে গেলে জেলেদের ছোট নৌকা ভাড়া নিতে হবে। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ৪-৫ জন বসা যায়।
কোথায় থাকবেন
রাতারগুলে যেতে হলে আপনাকে সিলেট শহর বা তার আশেপাশেই কোন হোটেলে থাকতে হবে। তবে আপনি চাইলে কম ভাড়া বা বেশি ভাড়ার যে কোন হোটেলই ভাড়া করতে পারেন।
লালা বাজার ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় ভালো মানের রুম পাওয়া যায়। এছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
আর আপনি যদি ভালো মানের হোটেল চান তাহলে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে ।
এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
আপনার যোগাযোগের জন্য এখানে কয়েকটি হোটেলের মোবাইল নাম্বার দেওয়া হলো।
হোটেল নাম | ঠিকানা | মোবাইল নাম্বার |
---|---|---|
হোটেল রোজ ভিউ | শাহজালাল উপশহর | ০৮২১-৭২১৪৩৯ |
হোটেল স্টার প্যাসিফিক | দরগা গেইট | ০৮২১-৭২৭৯৪৫ |
হোটেল হিল টাউন | ভিআইপি রোড | ০৮২১-৭১৬০৭৭ |
হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল | বন্দরবাজার | ০৮২১-৭২১১৪৩ |
হোটেল ফরচুন গার্ডেন | নাইওরপুল | ০৮২১-৭১৫৫৯০ |
হোটেল ডালাস | জেল সড়ক | ০৮২১-৭২০৯৪৫ |
হোটেল গার্ডেন ইন | লিঙ্ক রোড | ০৮২১-৮১৪৫০৭ |
হোটেল পলাশ | আম্বরখানা | ০৮২১-৭১৮৩০৯ |
হোটেল দরগাগেইট | দরগা | ০৮২১-৭১৭০৬৬ |
হোটেল উর্মি | দরগা | ০৮২১-৭১৪৫৬৩ |
হোটেল মুন লাইট | জিন্দাবাজার | ০৮২১-৭১৪৮৫০ |
গুলশান সেন্টার | তালতলা | ০৮২১-৭১০০১৮ |
সতর্কতা
রাতারগুল যাওয়ার আগে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। বর্ষায় রাতারগুল বন ডুবে যাওয়ার পর সাপ সাধারণত বিভিন্ন গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। যদি সাঁতার জানা না থাকে তবে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। প্রয়োজনে ছাতা ও রেইনকোট নিয়ে নিন।