নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) যাবেন? তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? হুমায়ূন মাখা সবুজের এক স্বপ্নময় পৃথিবী আবেগের পাহাড় নিয়ে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। ১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমিতে শুরু করে, বর্তমানে এটি প্রায় ৪০ বিঘা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
নুহাশ পল্লীতে প্রবেশের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত, এবং প্রবেশমূল্য ১২ বছরের ঊর্ধ্বে জনপ্রতি ২০০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য প্রবেশ ফি প্রযোজ্য নয়। সপ্তাহের সাত দিনই এটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
এটি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের নন্দন কানন । এটি হুমায়ূন আহমেদের নিজস্ব শুটিং স্পট। এটিকে তাঁর দ্বিতীয় বাসস্থানও বলা হয়। এখানেই পরম আনন্দে ঘুমিয়ে আছেন বাংলা সাহিত্যের এই মুকুটহীন সম্রাট।
হুমায়ূন আহমেদ ঢাকার খুব কাছেই গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার পিরুজালি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রিয় এই পল্লী। বিশাল গজারি বনের মাঝখানে প্রকৃতি যেন একটা সুন্দর সবুজ প্রশান্তির চাদর বিছিয়ে রেখেছে। যা দেখার জন্য বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন।
বর্তমানে এই পল্লী বাংলাদেশের মানুষের কাছে পিকনিকের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু অনেকে জানেন না কিভাবে নুহাশ পল্লী যাবেন? কোথায় খাবেন, কি কি দেখবেন ? কিভাবে পিকনিক করবেন? আর এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এবারের প্রতিবেদন।
Nuhash Polli – নুহাশ পল্লী কিভাবে যাবেন?
নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) যেতে হলে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। এর জন্য ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে বাস আসে। এসব বাসে করে আপনি খুব কম খরচেই গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে পারেবন।
তারপর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ রোডের শুরুতে মনিপুরের লেগুনা তে উঠে লেংড়া মার্কেট আসতে হবে। এর জন্য জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর ব্যাটারি চালিত রিকশায় চলে আসতে হবে এই পল্লী। এর ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা।
তবে একটু আরামে আসতে চাইলে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, ভালুকা, বা শ্রীপুর রুটের গাড়িতে করে হোতাপারা নামতে হবে। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
হোতাপারা থেকে সিএনজি বা রিকশায় চলে আসতে পারবেন নুহাশ পল্লী। ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
আর যারা নিজেদের গাড়ি নিয়ে যেতে চান তারা গাজীপুর চৌরাস্তা পার হয়ে ময়মনসিংহ রোডে চৌরাস্তা থেকে ২০ কি.মি আসলে হোতাপারা বাজার। হোতাপারা বাজার থেকে ৮ কি.মি বাম দিকে আসলেই নুহাশ পল্লী। নুহাশ পল্লীতে কোন খরচ ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।
নুহাশ পল্লীতে প্রবেশের নিয়ম
নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) ঢুকতে কোন পূর্ব অনুমতি লাগেনা। ২০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে যেকেউ ঢুকতে পারে। ১০বছরের নীচে বাচ্চাদের, ড্রাইভার এবং গাড়ি পার্ক এর জন্য কোন টাকা লাগেনা ।
উল্লেখ্য হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে হলে কোন এন্ট্রি ফি লাগেনা। কবর জিয়ারতের জন্য মূল গেইটের বাইরে বাম দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি গেইট আছে। যে কেউ সেই গেইট দিয়ে ঢুকে কবর জিয়ারত করতে পারবেন।
নুহাশ পল্লীতে কি কি দেখবেন?
এই পল্লীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বাংলা সাহিত্যের সম্রাট কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি । যেখানেই হাঁটবেন সেখানেই আপনার প্রিয় লেখকের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এখানে যা তৈরি করেছেন তার সব কিছুই নিজের প্রয়োজনে।
এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এখানে হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঔষধি বৃক্ষের বাগান।যার প্রতিটি বৃক্ষ তাঁর নিজের হাতে লাগানো।
এই বাগানে প্রায় ৩০০- ৩৫০ প্রজাতির ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে- যা এখন বোটানির ছাত্র ছাত্রী, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও বৃক্ষপ্রেমীদের এক রিসার্চ সেন্টারে পরিনত হয়েছে ।
যা যা আছে-
- মাটির প্রাচীর
- মা ও ছেলের ভাস্কর্য
- সুইমিং পুল
- কাক দেশান্তরী আম বাগান
- লিচু বাগান
- ৭০ টি তাল গাছ
- পদ্ম পুকুর
- পবন ঝাউ গাছ
- লীলাবতী দ্বীপ
- শুটিং ফ্লোর
- শ্বেত পাথরের শানবাঁধানো ঘাট
- ট্রি হাউজ
- শান্তির প্রতীক কবুতর
- ভূত বিলাস
- জমিদারী ঘাট
- দিঘি লীলাবতী
- সুবিশাল মাঠ
- প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রানী (ডাইনোসর)
- রূপবতী মৎস্য কন্যা
- বৃষ্টি বিলাস
- চা কফি বাগান
- উইশ ট্রি
- শিশু পার্ক
- মাটির তৈরি ঘর ও পানির কূয়া
- কৃত্তিম পাহাড় ও চীন দেশের দৈত্য
- বিশাল ব্যাঙের ছাতা
- বিস্ময়কর দাবা ঘর
- কল্পনার লীলাবতীর ভাস্কর্য
- তেঁতুল বৃক্ষ ও ভূত বিলাস
- মানুষের মাথার বিশাল কঙ্কাল
- হোয়াইট হাউজ
- হুমায়ূন আহমেদ এর মুরাল
- হুমায়ূন আহমেদের সমাধি
এন্টি, পিকনিক ও প্যাকেজ ট্যুর ফি
ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পল্লী পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। ঐ সময় সাধারন দর্শনার্থীরা ২০০ টাকা টিকেট কেটে ঢুকতে পারবেন। কিন্তু তারা পিকনিক করতে পারবেন না। শুধু মাত্র ঘুরে দেখতে পারবেন।
শুধু মাত্র যারা বুকিং দিবেন তারাই পিকনিক করতে পারবেন। এক দিন শুধুমাত্র একটি পার্টিকেই পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়।
প্যাকেজ | ফি |
---|---|
এন্টি ফি | ২০০ টাকা |
ফুল ডে পিকনিক (৫০-৩০০ জন) | ৬৯,০০০ টাকা (সরকারী বন্ধের দিন) |
ফুল ডে পিকনিক (৫০-৩০০ জন) | ৫৭,৫০০ টাকা (সাধারণ দিন) |
উল্লেখ্য, নুহাশ পল্লীর (Nuhash Polli) ভিতরে কোন খাবার রেস্তুরা নাই। তবে ১৫/২০ জনের বেশী লোক হলে খাবারের অর্ডার নিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়।
এখানে রাতে থাকার কোন ব্যবস্থা নাই। দিনেও কোন রুম ভাড়া দেয়া হয় না। শুধু মাত্র পিকনিক/ গ্রুপ প্যাকেজ ট্যুর এর জন্য বুকিং করলে রুম দেয়া হয়। এছাড়া ১ টি রুম সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।