E-Passport Bd Fee (epassport) ই-পাসপোর্ট ফি কত? পাবেন কত দিনে? এ নিয়ে যদি আপনি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এ প্রতিবেদন আপনার জন্য। বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট এর চাহিদা। আসুন এবার জেনে নিই এই পাসপোর্ট ফি কত? বা এই পাসপোর্ট পেতে কত দিন সময় লাগবে?
বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট হলো একটি আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাসপোর্ট যা ইলেকট্রনিক চিপ যুক্ত। এটি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভ্রমণ নথি হিসেবে কাজ করে। নিচে ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো।
পুরনো এমআরপি ভিসার মেয়াদ শেষ হলে এখন যে কেউ এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে পাঁচ বছর এবং দশ বছর মেয়াদি এই ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। একইভাবে এ পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বিশ্বে ১১৯তম দেশ। বর্তমানে ৬ মাসের বেশি মেয়াদ থাকা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি পাসপোর্ট যাদের আছে তাদের এই পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা নতুন করে আবেদনকারীদের দেওয়া হবে ই-পাসপোর্ট।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের ৫ ও ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে (ভিসা কার্ড, কিউ-ক্যাশ, বিকাশ) পেমেন্টের পাশাপাশি ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ও ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া যাবে।
E-Passport Bd Fee (epassport) ই-পাসপোর্ট ফি কত? পাবেন কত দিনে?
আসুন এবার আমরা জেনে নিই এ পাসপোর্ট পেতে কত টাকা এবং কত সময় লাগবে। আপনি চাইলে ৪৮ পাতা বা ৬৪ পাতার জন্য এ পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। তবে তার জন্য আলাদা ফি প্রদান করতে হবে।
মেয়াদ | পৃষ্ঠা | ১৫ দিনে পেতে | ৭ দিনে পেতে | ২ দিনে পেতে |
---|---|---|---|---|
৫ বছর | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
৫ বছর | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা | ১২,০৭৫ টাকা |
১০ বছর | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫,৭৫০ টাকা | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
১০ বছর | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০টাকা | ১৩,৮০০ টাকা |
বৈশিষ্ট্য
- ইলেকট্রনিক চিপ: এই পাসপোর্টে একটি ইলেকট্রনিক চিপ যুক্ত থাকে যেখানে পাসপোর্টধারীর বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, এবং স্বাক্ষর) সংরক্ষিত থাকে।
- সুরক্ষা ব্যবস্থা: বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে কার্যকর।
- আন্তর্জাতিক মান: আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ICAO) এর মানদণ্ড অনুসরণ করে।
- মেয়াদ: পাসপোর্ট সাধারণত ৫ বছর বা ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়।
- পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪৮ বা ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট পাওয়া যায়, যা ভ্রমণের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচিত করা যায়।
প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
- অনলাইনে আবেদন: ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে আবেদন করতে হবে।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান: আবেদন করার পর নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, আঙ্গুলের ছাপ এবং স্বাক্ষর) জমা দিতে হয়।
- প্রসেসিং সময়: সাধারণত নরমাল প্রসেসিংয়ে ১৫-২০ কার্যদিবস এবং জরুরি প্রসেসিংয়ে ৭-১০ কার্যদিবস সময় লাগে।
- ফি: পাসপোর্টের জন্য ফি নির্ভর করে মেয়াদ ও প্রসেসিং টাইমের উপর।
সুবিধা
- দ্রুত ভ্রমণ প্রক্রিয়া: ই-পাসপোর্টে ইলেকট্রনিক চিপ থাকায় ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
- বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা: আন্তর্জাতিক মানের কারণে এটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গ্রহণযোগ্য।
- উন্নত নিরাপত্তা: বায়োমেট্রিক ডেটা এবং চিপের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় জাল পাসপোর্টের ঝুঁকি কমে।
- ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন: অনেক বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যায়।
চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়
- সিস্টেমিক বিলম্ব: কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদনের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হতে পারে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী সময় ধরে আবেদন করতে হবে।
- সঠিক তথ্য প্রদান: আবেদন করার সময় সঠিক তথ্য প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল তথ্যের কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে।
- ডকুমেন্টের যত্ন: পাসপোর্টের চিপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি অকার্যকর হতে পারে। তাই এটি যত্নসহকারে ব্যবহার করতে হবে।
এই পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আরও সহজ এবং নিরাপদ করেছে। এটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকদের সেবা প্রদানে সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ।
কিভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয়?
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া সহজ এবং অনলাইনে করা যায়। নিচে বিস্তারিত প্রক্রিয়া দেওয়া হলো:
১. অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূর্ণ করা:
- প্রথমে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের e-passport সিস্টেমে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূর্ণ করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে ঢুকে “Apply for E-passport” অপশন নির্বাচন করুন।
- এখানে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পরিচয়পত্র, ছবি ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করা:
আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (বা জন্ম সনদ)
- পাসপোর্টের পুরনো কপি (যদি পুনর্নবীকরণ করতে চান)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি (অনলাইনে আপলোড করার জন্য ডিজিটাল ছবি)
- বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কিত ডকুমেন্ট (যেমন: গ্যাস/বিদ্যুৎ বিল বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
৩. ফি পরিশোধ:
- আবেদন করার পর আপনাকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিকাশ/নগদ ইত্যাদি মাধ্যমে।
- ফি পরিশোধের জন্য একাউন্ট নম্বর ও অন্যান্য তথ্যও ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে।
৪. সাক্ষাৎকারের জন্য এপয়েন্টমেন্ট:
- আপনার আবেদন এবং ফি পরিশোধ সম্পন্ন হলে, আপনাকে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে সাক্ষাৎকারের জন্য এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য জানানো হবে।
- সাক্ষাৎকারের দিন আপনি আপনার আবেদনপত্র, ছবি এবং অন্যান্য ডকুমেন্টসসহ উপস্থিত হবেন।
৫. ডকুমেন্টস যাচাই:
- পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার ডকুমেন্টস যাচাই করা হবে।
- যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে আপনাকে পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ (fingerprint) এবং ছবি নেওয়া হবে।
৬. পাসপোর্ট গ্রহণ:
- আপনার ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে, আপনাকে ই-মেইলে অথবা মোবাইল মেসেজে জানানো হবে যে পাসপোর্টটি প্রস্তুত হয়েছে।
- এরপর আপনি পাসপোর্টটি নির্ধারিত স্থান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
আবেদন ফর্মের লিঙ্ক:
আপনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের এই লিঙ্ক থেকে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, তবে বিস্তারিত বা যদি কোন পরিবর্তন থাকে, সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট বা কাছের পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করা ভালো।
একনজরে ই-পাসপোর্ট
ই-পাসপোর্ট (e-passport) হচ্ছে একটি আধুনিক ও নিরাপদ ধরনের পাসপোর্ট, যা বায়োমেট্রিক তথ্যসহ একটি ইলেকট্রনিক চিপ দ্বারা সজ্জিত থাকে। এই চিপে ব্যক্তির ছবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন:
- নাম
- জন্মতারিখ
- পাসপোর্ট নম্বর
- জাতীয়তা
- আঙ্গুলের ছাপ (fingerprint)
- চোখের আইরিস স্ক্যান (iris scan)
বৈশিষ্ট্য:
- বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা: পাসপোর্টধারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার হয়।
- ইলেকট্রনিক চিপ: এতে সংযুক্ত চিপের মাধ্যমে স্ক্যান করে সহজেই যাচাই করা যায় পাসপোর্টের সঠিকতা।
- নকল করা কঠিন: নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় এটি জাল করা বা নকল করা অনেক কঠিন।
- স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন: অনেক দেশে পাসপোর্টধারীরা ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট:
বাংলাদেশ ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এখন নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীরা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।