Nafakhum Waterfall নাফাখুম ঝর্ণা কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
নাফাখুম ঝর্ণা কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

Nafakhum Waterfall নাফাখুম ঝর্ণা কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে বিশাল জলরাশি। যে জলরাশি গায়ে মেখে আপনি কিছুটা প্রশান্তি পেতে পারেন। আর এ সব কিছু নিয়ে নাফাখুম ঝর্ণা Nafakhum Waterfall আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। নয়নাভিরাম এ ঝর্ণাটি বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত।

বান্দরবান হতে ৭৯ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত থানচি। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে।

নদীর কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশে পাবেন সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড়। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে।

আর এই পুরোটা পথই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপরুপ সৌন্দর্য্য। যা আপনাকে সতেজ রাখবে বহুদিন।

এটি বাংলাদেশের আমিয়াখুম জলপ্রপাত এর পরই দ্বিতীয় বড় জলপ্রপাত হিসেবে ধরা হয়। অনিন্দ্য সুন্দর এই জলপ্রপাতটি রেমাক্রি থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টা হাঁটার পথ দূরত্বে অবস্থিত।

nafakhum waterfall নাফাখুম ঝর্ণা

Nafakhum Waterfall নাফাখুম ঝর্ণা কিভাবে যাবেন?

নাফাখুম ঝর্ণা যেতে আপনাকে প্রথম যেতে হবে বান্দরবান। এরপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রি বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে স্বপ্নের নাফাখুম।

রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। বর্ষায় ইঞ্জিনবোটে থানচি থেকে তিন্দু যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। তিন্দু থেকে রেমাক্রি যেতে লাগবে আরও আড়াই ঘণ্টা।

ঢাকা থেকে বান্দরবান

ঢাকা থেকে এস. আলম, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

জনপ্রতি এসব নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০-৬৫০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ৯৫০-১৫০০ টাকা।

তাছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম গিয়ে সেখান থেকেও বান্দরবান যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে প্রতিদিনই সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন চটগ্রাম যায়। এসব ট্রেনের ভাড়া শ্রেনী ভেদে ৩২০-১৫০০ টাকা।

আর আপনার যদি বাজেট সমস্যা না থাকে তাহলে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিমানে গিয়ে সেখান থেকেও বান্দরবান যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার ভাড়া পরতে পারে আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এরপর চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবান। ভাড়া পরতে পারে ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মতো।

বান্দরবান থেকে থানচি

নাফাখুম ঝর্ণা যেতে বান্দরবান থেকে আপনাকে যেতে হবে থানচি। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়া যায় দুইভাবে। বাসে কিংবা রিজার্ভ জীপে। বান্দরবানের থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে এক ঘণ্টা পর পর লোকাল বাস থানচির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি বাস ভাড়া ২০০ টাকা। সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।

এছাড়া রিজার্ভ জীপ বা চান্দের গাড়িতে গেলে খরচ হবে ৫,৫০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা। সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। এক গাড়িতে ১২-১৪ জন যাওয়া যায়।

থানচি থেকে রেমাক্রি

থানচি পৌঁছে আপনাকে প্রথেমই একজন গাইড ঠিক করে নিতে হবে। গাইড ছাড়া নাফাখুম ভ্রমণে যেতে পারবেন না।

উপজেলা প্রসাশন থেকে অনুমতি পাওয়া যে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারবেন। সাথে গিয়ে পরদিন থানচি ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ফি ১৫০০টাকা।

মনে রাখবেন বিকেল ৩ টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই আপনাকে অবশ্যই ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। তা না হলে পরদিন সকালে রেমাক্রি যেতে হবে।

অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে। এক নৌকায় ৪-৫ জন যেতে পারবেন।

রেমাক্রি পর্যন্ত নৌকা রিজার্ভ যাওয়া ও পরদিন আসা সহ ভাড়া পরবে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা।

সাঙ্গু নদীতে পানি কম থাকলে কিছু জায়গায় নৌকা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হবে। তখন সময় একটু বেশি লাগতে পারে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম

রেমাক্রি খাল ধরে হেঁটে নাফাখুম ঝর্ণা যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘন্টা। তবে আপনার হাঁটার গতির উপর এ সময় অনেকটা নির্ভর করে। বর্ষার সময় রেমাক্রি খালে পানি অনেক বেশি থাকে। কোথাও কোমর পানি কিংবা কোথাও আরও বেশি।

কিছু জায়গায় রেমাক্রি খাল এপার ওপার করতে হবে। পানি বেশি থাকলে এই পারাপারে সময় বেশি লাগবে। তবে এতে আপনার গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।

nafakhum waterfall নাফাখুম ঝর্ণা

নাফাখুম ঝর্ণা কোথায় থাকবেন?

নাফাখুম ঝর্ণা দেখতে থানচিতে গেলে আপনি বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত অবকাশ কেন্দ্রে থাকতে পারবেন। রুম ভাড়া ১৫০০-৩০০০ টাকা এর মধ্যে।

এছাড়া থানচি বাজার ও আশেপাশে কিছু কটেজ ও রেস্টহাউজ ধরণের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে। মান অনুযায়ী দিন প্রতি ভাড়া ২০০-১০০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া রেমাক্রি বাজারে আদিবাসীদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা আছে। সাঙ্গু নদীর পাশে আদিবাসীদের রেস্ট হাউজে কয়েকজন মিলে থাকতে হলে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা।

নাফাখুম ঝর্ণা কোথায় খাবেন?

থানচি বাজারে মোটামুটি মানের কিছু খাওয়ার হোটেল আছে। পছন্দ অনুযায়ী যে কোন একটায় খেয়ে নিতে পারবেন।

রেমাক্রিতে আদিবাসী বাড়িতেও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আগে থেকে বলে রাখলেই হবে। অনেকটা প্যাকেজ সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থা।

সাধারণত ভাত, ভর্তা, ভাজি ও ডিম খেতে খরচ হবে ৮০ টাকা। ডিমের বদলে মুরগি খেতে চাইলে খরচ হবে ১২০ টাকা।

আগে থেকেই গাইডকে দিয়ে জানিয়ে রাখবেন কি খাবেন ও কতজন খাবেন। তবে অর্ডার করার সময়ই খরচটা আলোচনা করে নেবেন।

nafakhum waterfall

নাফাখুম ভ্রমণে সতর্কতা

  • বর্ষায় নাফাখুম ঝর্ণা দেখতে গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সাথে নিবেন।
  • ট্রেকিং এর জন্যে ভালো গ্রিপের জুতা ব্যবহার করতে হবে।
  • পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, হাঁটার সময় সাবধান থাকুন যেন পা পিছলে না যায়।
  • জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর ও পাথর আছে, উপর থেকে লাফ দিবেন না।
  • ট্রেকিং এর সময় বাঁশের লাঠি সাথে রাখুন, হাঁটতে সুবিধা হবে।
  • গভীর পানির রেমাক্রি খাল পাড় হবার জন্যে সাথে করে দড়ি নিবেন, নয়তো গাইড কে বলবেন।
  • থানচির পর মোবাইল নেটওয়ার্ক তেমন কাজ করে না। নাই বললেই চলে।
  • থানচির পর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা নেই, আগে থেকেই ক্যামেরা মোবাইল ভালো করে চার্জ দিয়ে নিন। প্রয়োজনে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিন।
  • সাথে ফার্স্ট এইড কিট বক্স রাখুন।
  • ট্রেইলে হাঁটার সময় সাথে পানির বোতল রাখুন।
  • দল ছেড়ে একা কোথাও যাবেন না। পাহাড়ে দলছুট হয়ে গেলে রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
  • ছোট বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষ নিয়ে ভ্রমণ করা উচিত নয়। তাছাড়া যে কেউ নাফাখুম যেতে পারবেন।
  • বিস্কিক, চিপস, চকলেট, স্যালাইন এর প্যাকেট, পলিথিন জাতীয় কিছু ও ময়লা আবর্জনা দয়া করে সেখানে সেখানে ফেলবেন না।
Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post