Cox’s Bazar কক্সবাজার কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
Cox's Bazar কক্সবাজার

Cox’s Bazar কক্সবাজার কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

Cox’s Bazar কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্ম এমন কোনো ঋতু নেই যখন সমুদ্র সৈকতের চেহারা বদলায় না।

অনেকের মতে, কক্সবাজার বাংলাদেশের সবথেকে দর্শণীয় স্থান। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্হিত একটি পর্যটন শহর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত।

কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্হিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।

একসময় এটি পানোয়া নামেও পরিচিত ছিল। যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি।

এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার (পূর্ব নাম – বার্মা), থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট।

Coxs Bazar কক্সবাজার

Cox’s Bazar কক্সবাজার কিভাবে যাবেন?

বিমান বা সড়ক পথে আপনি সহজেই কক্সবাজার পৌছতে পারবেন। আর চাইলে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আপনি ট্রেনেও চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। সেখান থেকে বাসে করে পৌছাতে পারবেন এ সমুদ্র সৈকতে।

বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউ-এসবাংলার বেশকিছু বিমান প্রতিদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য চলাচল করে। আপনি চাইলে মাত্র ১ ঘন্টায় এসব ফ্লাইটে করে ঢাকা থেকে সেখানে পৌছতে পারেন। এসব বিমানের ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ১১০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মাঝে মধ্যেই এসব বিমান কোম্পানি বড় বড় অফার দেয়। তখন ভাড়া অনেকটাই কমে যায়।

আর আপনি যদি বাসে করে ঢাকা থেকে এ সমুদ্র সৈকতে পৌছতে চান তাহলে আপনার জন্য আছে অনেক উপায়। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

বাসের ভাড়া হতে পারে ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।

Coxs Bazar

কক্সবাজারে কি কি দেখবেন?

সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। তবে এর বাইরেও আরও কিছু দর্শণীয় স্থান আপনাকে শিহরিত করবে। কক্সবাজার গেলে অবশ্যই এসব জায়গা একবার দেখে আসবেন।

কলাতলী বিচ

কলাতলী বিচ কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। সমুদ্র সৈকতের খুব কাছেই এই সৈকত। যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে প্রকৃতির আরেক অপরুপ দৃশ্য।

বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। সমুদ্রে গোসল করতে আসেন।

কলাতলী বিচে রয়েছে নানা ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্টসহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা। বিশেষ করে চাঁদনি রাতে বিচে হাঁটা সত্যিই রোমঞ্চকর। সকাল এবং সন্ধ্যায় এখানে বিভিন্ন ধরনের শুকনো মাছ ও খাবার পাওয়া যায়।

লাবনী বিচ

সমুদ্রের আসল রুপ দেখতে চান? তাহলে লাবনী বিচে যান! এটি পুরাতন সি-বিচ নামেও অনেকের কাছে পরিচিত।

শহরের খুব কাছে হওয়ার কারণে লাবণী বিচকে প্রধান সমুদ্র সৈকত বলেও মনে করা হয়। বাসে করে কলাতলী সি-বিচ রোডে নেমে রিকশা অথবা পায়ে হেটেই যেতে পারবেন এই সমুদ্র সৈকতে।

সৈকত সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ছোট বড় অনেক দোকান। এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।

হিমছড়ি

কক্সবাজার যাবেন আর হিমছড়ি ঘুরে আসবেন না! হ্যা, প্রধান সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্র।

এখানকার সমুদ্র সৈকতটি নির্জন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এর সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়।

হিমছড়ি যত না সুন্দর তার চাইতে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হল এ সৈকতে যাওয়ার পথটি। একপাশে বিস্তৃর্ণ সমুদ্রের বালুকা বেলা আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ের সাড়ি। মাঝে পিচ ঢালা মেরিন ড্র্রাইভ।

এমন দৃশ্য সম্ভবত দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভাসবে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া বিশাল সমুদ্র।

ইনানি বিচ

সমুদ্রের নতুন আরেক রুপ দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন ইনানী বিচ। হিমছড়ি থেকে আরো ০৫ কিলোমিটার গেলেই এই সমুদ্র সৈকত।

ইনানী বীচে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই। এ সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার আর ধরণের।

অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর।

প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক-ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক।

সোনাদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজারের বিপরীতে উপকূলীয় ছোট একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। এটি পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গ। তাই অবশ্যই এই দ্বীপটি ঘুরে আসবেন।

দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গ কি.মি.। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত।

একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালী দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মনোরম এ দ্বীপের পশ্চিমাংশে বালুকাময় ও ঝিনুকের জন্য বিখ্যাত।

মহেশখালী দ্বীপ

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ। মহেশখালীতে রয়েছে হিন্দুদের তীর্থস্থান বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দির সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান।

প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এ প্রাচীন সভ্যতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। নেপালের রাজদরবারের বদান্যতায় ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় এটি নতুন রূপ ধারণ করেছে।

শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত এই মহেশখালী।

এছাড়াও সময় পেলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন রামু উপজেলা। যার পুরোটাই আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। কক্সবাজারের আরেক দর্শণীয় স্থান ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটিও আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

Coxs Bazar 2

কোথায় থাকবেন?

কক্সবাজারে গেলে থাকার কোন চিন্তা নেই। ছোট বড় অসংখ্য হোটেল ও মোটেল সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এসব হোটেলে আপনি যেমন ২০০ টাকা দিয়েও রাত পার করতে পারবেন। আবার ফাইভ ষ্টার হোটেলে গিয়েও বিন্দাস মজা করতে পারবেন। বাজেট বুঝে সিদ্ধান্ত আপনার।

হোটেল মোটেল লিষ্ট ও ভাড়ার তালিকা জানতে এখানে ক্লিক করুন।

তবে পিক সিজনে কক্সবাজারে গেলে হোটেল রুম আগে থেকে ভাড়া করে যেতে হবে। কারণ তখন পর্যটক বেশি থাকায় যখন তখন হোটেল পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়।

Coxs Bazar 1

কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, যা বিশ্বের দীর্ঘতম অক্ষত বালুকাময় সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত, বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। এখানে সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:

প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
  • অবস্থান: এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত।
  • প্রকৃতি: সৈকতটি টানা দীর্ঘ এবং বালুকাময়, যা একে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।

আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

  • হিমছড়ি: কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, যেখানে পাহাড় এবং সমুদ্রের মেলবন্ধন দেখা যায়।
  • ইনানী সৈকত: পরিচ্ছন্ন এবং শান্তিপূর্ণ এই সৈকতটি পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
  • মহেশখালী দ্বীপ: সামুদ্রিক পথ পাড়ি দিয়ে মহেশখালী দ্বীপে যাওয়া যায়, যা মন্দির এবং পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত।
  • সোনাদিয়া দ্বীপ: জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত, এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা।

পর্যটন মৌসুম

  • শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) পর্যটনের জন্য সেরা সময়। এ সময়ে আবহাওয়া শীতল এবং আরামদায়ক থাকে।

পর্যটকদের জন্য কার্যকলাপ

  • সাঁতার কাটা ও সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ।
  • সৈকতে নৌকাভ্রমণ এবং মাছ ধরার অভিজ্ঞতা।
  • সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা।
  • স্থানীয় বাজার থেকে সামুদ্রিক শৈল্পিক পণ্য কেনা।

সংযোগ ও পরিবহন

  • বিমান: ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে।
  • সড়কপথ: চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে বাসে যাওয়া যায়।
  • রেলপথ: নতুন রেল সংযোগ কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বিশেষ তথ্য

  • এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের একটি মূল কেন্দ্র।
  • এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযোগী।

পর্যটনের গুরুত্ব

  • এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

আপনি কক্সবাজার ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে এর আশপাশের সৌন্দর্যপূর্ণ স্থানগুলোও দেখতে ভুলবেন না!

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post