বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান | সেরা ১০ | কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান | সেরা ১০ | কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

অপরুপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা দেশটির যেদিকেই তাকাবেন মুগ্ধ হবেন। তবে এবার আমরা জানাব সেরা ১০ বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান। জানিয়ে দেব, কিভাবে আপনি সহজে এসব জায়গায় ঘুরে আসবেন।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান | সেরা ১০

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা অনেক। তারউপরে কেউ পাহাড় পছন্দ করেন, কেউ সাগর। কারো আবার পছন্দ ঘন অরণ্য। তবে বাংলাদেশের সবথেকে দর্শনীয় ও জনপ্রিয় ১০টি স্থান নিয়ে এ প্রতিবেদন।

তবে এ তালিকার সঙ্গে কেউ একমত না হলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন আপনার দেখা সেরা দর্শনীয় স্থান কোনটি?

saint martin's island

সেন্টমার্টিন দ্বীপ | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম সেন্টমার্টিন দ্বীপ । আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল যেখানে মিলেমিশে একাকার। বালি, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণ পিপাসুমানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র এই সেন্টমার্টিন।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যা মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপকে স্থানীয় ভাষায় নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়।

সবথেকে আনন্দের খবর, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল। তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

তবে যারা দিনে গিয়ে দিনেই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন তারা পরবর্তীতে আফসোস করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় অন্তত একদিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা। এতে যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে।

Cox's Bazar কক্সবাজার

কক্সবাজার | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্ম এমন কোনো ঋতু নেই যখন সমুদ্র সৈকতের চেহারা বদলায় না।

অনেকের মতে, কক্সবাজার বাংলাদেশের সবথেকে দর্শণীয় স্থান। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্হিত একটি পর্যটন শহর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্হিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।

একসময় কক্সবাজার পানোয়া নামেও পরিচিত ছিল। যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি।

এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার (পূর্ব নাম – বার্মা), থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট।

sundarbans

সুন্দরবন | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম স্থান সুন্দরবন। বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে সুন্দরবন বিস্তৃত।

১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। আর যারা প্রকৃতি পছন্দ করেন তাদের কাছে বেড়ানোর জন্য সব থেকে আদর্শ স্থান হতে পারে এই সুন্দরবন।

যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে।

আপনি চাইলে সড়ক ও নদীপথে সুন্দরবন যেতে পারেন। সড়ক পথে– খুলনা খেকে বাসযোগে কয়রা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়। নদী পথে– খুলনা লঞ্চঘাট খেকে লঞ্চযোগে সুন্দরবন যাওয়া যাবে। রাতে ও সকালে লঞ্চ রয়েছে।

ঢাকা থেকে সুন্দরবন যেতে চাইলে সরাসরি বাসে খুলনা যেতে হবে। এছাড়া ট্রেন ও বিমানেও খুলনা যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে খুলনার ট্রেনে উঠে খুলনা শহরে যেতে পারবেন। বিমানে যেতে হলে যশোর নামতে হবে।

যশোর থেকে বাস অথবা গাড়ী ভাড়া করে খুলনা যাওয়া যায়। খুলনা শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে রাতে অবস্থান করে পরের দিন সকালে সুন্দরবন যেতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথম যেতে হবে মংলা।

খুলনা থেকে প্রাইভেট গাড়ি অথবা বাসে মংলা যাওয়া যায়। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চে যেতে হবে সুন্দরবন।

এছাড়া খুলনা স্টিমার ঘাট থেকে সকালে সরাসরি সুন্দরবন লঞ্চ ছেড়ে যায়। এগুলো বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির। তাদের কাছ থেকে আগে টিকিট কেটে রাখতে হবে।

Kuakata

কুয়াকাটা | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম স্থান কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে একই সাথে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট কুয়াকাটাকে সকল সমুদ্র সৈকত থেকে অনন্য করেছে। পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দিগন্তজোড়া সুনীল আকাশ এবং ম্যানগ্রুভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত।

কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, এখানে দেখার মতো আছে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। পূর্ব ও পশ্চিমের ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর, গঙ্গামতির জঙ্গল, লাল কাকড়া দ্বীপও সবুজ অরণ্য উপভোগের সাথে সাথে পাবেন সুন্দরবনের একাংশ দেখার সুযোগ। কিংবা কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়া, বৌদ্ধমন্দির কিংবা দুর্গম চর বিজয় অভিযানের জন্যেও কুয়াকাটা বেড়াতে যেতে পারেন।

নদী ও সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অনেক কম সময়ে এবং সহজে যাওয়া যায়।

  • কুয়াকাটা | কিভাবে যাবেন | কি দেখবেন | খরচ কেমন

কক্সবাজারের মত এত আবাসিক হোটেল রিসোর্ট না থাকলেও কুয়াকাটায় আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল/রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। মোটামুটি বাজেটের হোটেলে থাকতে আপনার খরচ হবে ২০০০-৩০০০ টাকা। কম বাজেটে থাকার জন্যে দুইজনের জন্য রুম পেয়ে যাবেন ১০০০ – ২০০০ টাকায়। বাজেট যদি আপনার সমস্যা না হয় তাহলে চলে যেতে পারেন শিকদার রিসোর্ট এর মত অভিজাত রিসোর্টে।

কুয়াকাটায় বেশিরভাগ হোটেলেই নিজস্ব রেস্টুরেন্টে তাদের অতিথিদের খাবারের জন্য ব্যবস্থা করে। এছাড়া এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশেপাশেই অনেক খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার আগে সেই জায়গাটি নিরাপদ কিনা তা অবশ্যই জেনে সমুদ্রে নামবেন। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া সমুদ্রে নামবেন না। খাওয়া দাওয়া কিংবা বাইক ভাড়া, যে কোন কিছুতে দরদাম ঠিক করে নিন। যে কোন প্রয়োজনে কুয়াকাটায় টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন।

Sajek Valley

সাজেক ভ্যালি | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য সাজেক ভ্যালি। চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম স্থান এই সাজেক ভ্যালি।

সাজেক থেকে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে পাবেন। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ।

খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিলোমিটার।

আপনি চাইলে রাঙামাটি বা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে পারেন। তবে খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়া আপনার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।

ঢাকা থেকে বিআরটিসি, সেন্টমার্টিন, শ্যামলি, হানিফ পরিবহনসহ বেশকিছু এসি ও নন এসি বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে করে ভাড়া পড়তে পারে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকার মতো।

এতে করে আপনার সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। বাসগুলো সাধারণত রাত ১০ টার মধ্যে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

রাঙামাটি হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে আপনাকে প্রথম ঢাকা থেকে রাঙামাটি যেতে হবে। শ্যামলী, সেন্টমার্টিন, হানিফ, ইউনিক, এস আলমসহ বেশকিছু বাস প্রতিদিন এ রুটে চলাচল করে।

এসব নন এসি বাসের ভাড়া ৬২০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

Ratargul

রাতারগুল | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। দীর্ঘ এই এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত।

চিরসবুজ এই বন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। বর্ষাকালে এই বন ২০–৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর, পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে।

রাতারগুল যেতে প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে যেতে হবে সিলেটে। গাবতলী, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা প্রভৃতি পরিবহনের এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা।

আপনি চাইলে ট্রেনে করেও সিলেটে যেতে পারেন। কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এছাড়া বাজেট ভালো থাকলে ফ্লাইটেও খুবই কম সময়ে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে পারেন। তার জন্য আপনার সময় কমে গেলেও খরচ বেড়ে যাবে।

nafakhum waterfall

নাফাখুম ঝর্ণা | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বান্দরবান হতে ৭৯ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত থানচি। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে।

নদীর কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশে পাবেন সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড়। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে।

আর এই পুরোটা পথই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপরুপ সৌন্দর্য্য। যা আপনাকে সতেজ রাখবে বহুদিন।

এটি বাংলাদেশের আমিয়াখুম জলপ্রপাত এর পরই দ্বিতীয় বড় জলপ্রপাত হিসেবে ধরা হয়। অনিন্দ্য সুন্দর এই জলপ্রপাতটি রেমাক্রি থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টা হাঁটার পথ দূরত্বে অবস্থিত।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম নাফাখুম ঝর্ণা যেতে আপনাকে প্রথম যেতে হবে বান্দরবান। এরপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রি বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে স্বপ্নের নাফাখুম।

মনে রাখবেন বিকেল ৩ টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই আপনাকে অবশ্যই ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। তা না হলে পরদিন সকালে রেমাক্রি যেতে হবে।

থানচিতে গেলে আপনি বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত অবকাশ কেন্দ্রে থাকতে পারবেন। রুম ভাড়া ১৫০০-৩০০০ টাকা এর মধ্যে।

থানচি বাজারে মোটামুটি মানের কিছু খাওয়ার হোটেল আছে। পছন্দ অনুযায়ী যে কোন একটায় খেয়ে নিতে পারবেন।

Nijhum deep নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে হাতিয়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে নিঝুম দ্বীপের অবস্থান। ১৯৪০ এর দশকে এই দ্বীপটি বঙ্গোপসাগর হতে জেগে উঠা শুরু করে। মাছ ধরতে গিয়ে হাতিয়ার জেলেরা নিঝুম দ্বীপ আবিস্কার করে।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম নিঝুম দ্বীপকে অনেকে ইছামতির দ্বীপ, বাইল্যার চর বা চর ওসমান বলেও ডাকেন। তবে যে নামই হোক না কেন হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী এখানে নেই।

নিঝুম দ্বীপ যাবেন আর হরিন দেখবেন না? হরিন দেখতে বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে। সেখানে হরিণের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শীতকাল অর্থাৎ অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। বছরের অন্য সময় মেঘনা নদী ও সাগর বেশ উত্তাল থাকে তাই ওই সময় নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে সতর্ক থাকা উচিত।

নিঝুম দ্বীপ যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে করে নোয়াখালী যেতে হবে। নোয়াখালী মাইজদী হতে প্রথমে সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে।

সেখান থেকে চেয়ারম্যান ঘাট গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সা যোগে চেয়ারম্যান ঘাটে নামতে হবে। এরপর সীট্রাক/লঞ্চ সার্ভিসে নলচিরা ঘাটে নেমে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে জাহাজমারা ঘাটে যেতে হবে।

সেখানে গিয়ে নৌকাযোগে জাহাজমারা চ্যানেল পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছা যাবে।

Tanguar Hawor

টাঙ্গুয়ার হাওর | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। প্রায় ১২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।

অথৈ পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরুপ সাজে সাজিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর বর্তমানে পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন শত শত পর্যটক শতাধিক নৌকা নিয়ে হাওরজুড়ে ভেসে বেড়ান। অনেকে নৌকা নিয়ে হাওরেই রাতযাপন করেন। এটি একদিকে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা তৈরি করলেও এটিকে হাওরে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে। নানা রকম দেশি ও পরিযায়ী পাখি দেখতে শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যান পাখিপ্রেমীরা।

শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওরে। স্থানীয় জাতের মধ্যে আছে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতি কুট।

টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় গুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা বা ছড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশেছে। এই হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। পানি খুবই স্বচ্ছ হওয়ায় উপর থেকে হাওরের তলা দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট বড় প্রায় ৪৬ টি দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম আছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে হিজল, করচ, বরুণ, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলসী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া, সিংড়া, শালুক, শাপলা, গুইজ্জাকাঁটা, উকল ইত্যাদি।

Banggabandhu Safari Park

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রবেশ দ্বার দেখতে পাবেন।

প্রায় ৩,৬৯০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক ছোট ছোট টিলা ও শালবন সমৃদ্ধ। থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ডের অনুকরণে তৈরি সাফারী পার্কটি ২০১৩ সালে চালু করা হয়। এই সাফারি পার্কের অন্যতম আকর্ষণ কোর সাফারি। চারপাশে উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, বন্য হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী হেঁটে বেড়াচ্ছে আর তার মাঝ দিয়ে আপনি মিনিবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

হয়তো হঠাৎ সামনে থেকে এক বাঘ রাস্তা আটকিয়ে দিলো কিংবা জানালার পাশে এসে সিংহ গর্জন দিয়ে উঠলো। এমন অভিজ্ঞতা পেতে ঢাকা ও আশপাশ থেকে সারাদিন পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াবার জন্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক হতে পারে আদর্শ ঘুরে বেড়াবার জায়গা।

  • বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক | কিভাবে যাবেন | কি খাবেন | কোথায় থাকবেন

পুরো বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, কোর সাফারি পার্ক, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নামক ৫ টি অংশে বিভক্ত।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা। তবে ১৮ বছরের নিচে ছেলেমেয়েরা ২০ টাকায় পার্কে প্রবেশ করতে পারে। আর সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা ছাত্রছাত্রীদের পার্কে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিতে হয়। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে প্রবেশ মূল্য ১০০০ টাকা।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আগতদের জন্যে স্পেশাল প্রবেশ ফি রয়েছে। যদি শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ৪০-১০০ জন হয় তাহলে সবার প্রবেশ করতে ৪০০ টাকা লাগবে। যদি শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ এর বেশি হয় তাহলে প্রবেশ করতে ৮০০ টাকা লাগবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক বন্ধ থাকে। পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে সারাদিন চলে যাবে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি সকাল সকাল চলে যান। তাহলে আরামে সারাদিন ঘুরে ঘুরে সব অংশ দেখতে পারবেন।


বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান নিয়ে আপনার যদি আরও আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি আমাদের সঙ্গেই থাকুন। আমরা প্রতিনিয়ত এ ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করে যাচ্ছি। ধন্যবাদ। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান, বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড, ঘুরতে যাওয়ার স্থান বাংলাদেশ, পরিবার নিয়ে ঘোরার স্থান, ছুটিতে কোথায় যাবো, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post