Tanguar Haor টাঙ্গুয়ার হাওর কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
Tanguar Haor টাঙ্গুয়ার হাওর

Tanguar Haor টাঙ্গুয়ার হাওর কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

যদি স্বচ্ছ নিমল পানি আর পাহাড় আপনার পছন্দ হয়, তাহলে আপনার জন্য সেরা জায়গা হতে পারে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর Tanguar Haor। এখান থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় গুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা বা ছড়া এই হাওরে এসে মিশেছে। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। পানি খুবই স্বচ্ছ হওয়ায় উপর থেকে হাওরের তলা দেখা যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট বড় প্রায় ৪৬টির মত ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম আছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে এ হাওরকে Ecologically Critical Area (ECA) হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে এটি রামসার সাইট (Ramsar site) এর তালিকায় স্থান করে নেয়।

টাঙ্গুয়ার হাওর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরুপ করেছে। হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এর আয়তন বেড়ে প্রায় ২০০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে।

Tanguar Hawor

টাঙ্গুয়ার হাওর কিভাবে যাবেন?

দেশের প্রায় সব জেলা থেকে সুনামগঞ্জে বাসে আসা যায়। সুনামগঞ্জ হয়ে এ হাওর যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই সুনামগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে।

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ:

প্রতিদিন ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন, শ্যামলীসহ বেশ কয়েকটি পরিবহণের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহণের বাস। এসব নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকেট ভাড়া ৮২০-৮৫০ টাকা। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘন্টা।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ:

আর আপনি যদি সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান। সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লোকাল ও সিটিং বাস আছে। সিটিং বাস ভাড়া ১০০ টাকা, সুনামগঞ্জ যেতে দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে। অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লাইট গাড়িতে ২০০ টাকায় যাওয়া যায়।

সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়া:

সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন টাঙ্গুয়ার হাওর।

তবে শীতকালে পানি কমে যায় বলে আপনাকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক যোগে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন।

Tanguar Haor টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর কখন যাবেন?

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাস হাওর ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে ভালো সময়। শরতের নীল আকাশ, স্বচ্ছ পানি আর দূরের পাহাড়, সব মিলিয়ে অনেকের কাছে শরত কালের সময়টা প্রিয়। শীতের সময়টায় সাধারণত এর পানি অনেক কম থাকে। তবে তখন আপনি দেখতে পাবেন এক ভিন্ন হাওর। তবে অতিথী পাখি দেখতে চাইলে শীতকালেই যেতে হবে আপনাকে।

হাওর ভ্রমণে কি কি দেখবেন

এখানে এলে যে শুধু হাওরই দেখবেন তা নয়। এখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আরও বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। ভ্রমণ প্যাকেজের সাথে ছোট-ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক), শিমুল বাগান, বারিক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়সহ আরও বেশ কিছু স্পট ঘুরে দেখা যায়।

হাউজবোট ও নৌকা ভাড়া

বর্তমানে নানা ধরণের নানা মানের হাউজবোট, সেমি হাউজবোট কিংবা গতানুগতিক নৌকা পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখার জন্যে। প্যাকেজ অনুযায়ী বিভিন্ন মানের হাউজবোটের ভাড়া একেক রকম। সাধারণত এক রাত থাকা, খাবার ও হাওরসহ আশেপাশের সকল স্পট ঘুরে দেখার প্যাকেজ প্রিমিয়াম বোট গুলোর ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৬,০০০- ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মোটামুটি মানের সেমি হাউজবোট গুলোর প্যাকেজ ৪,৫০০- ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া পুরো হাউজবোট রিসার্ভ করলে মান ও ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত হাউজবোট গুলোর প্যাকেজে সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত থাকে। তারপরেও বুকিং বা ভাড়া করার আগে তাদের প্যাকেজ দেখে নিন, প্রয়োজনে দরদাম করে নিন। শুধু ডে ট্রিপ হলে খরচ কিছুটা কম হবে। রাতের ট্রিপে তাদেও খরচ বেশি।

নৌকা ভাড়া মূলত ৩টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নৌকায় ধারণ ক্ষমতা, নৌকার সুযোগ সুবিধা, কি কি ঘুরে দেখবেন, রাতে থাকবেন নাকি ড্রে ট্রিপ এবং সিজনের উপর। সাধারণত ছোট নৌকা ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, মাঝারি নৌকা ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা এবং বড় নৌকা ৫০০০ থেকে ১০,০০০ টাকায় সারাদিনের জন্য ভাড়া করা যায়। এক রাত নৌকায় থাকতে চাইলে টাকার পরিমাণ বাড়বে। রান্নার জন্য নৌকার মাঝিকে খরচের টাকা দিলে সে বাবুর্চি নিয়ে যাবে কিংবা নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে। কি করবেন তা অবশ্যই মাঝির সাথে আগে আলোচনা করে দরদাম ঠিক করে নিবেন।

এছাড়া খরচ কমানোর জন্যে লোকাল বডির নৌকা গুলো ভাড়া করতে পারেন। তবে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখুন যেমন নৌকায় বাথরুম আছে কিনা, বিদ্যুত, লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা আছে কিনা।

টাঙ্গুয়ার হাওর

কোথায় থাকবেন

টাঙ্গুয়ার হাওর যারা ঘুরতে যান, তারা সাধারণত হাউজবোটেই রাত্রিযাপন করেন। এছাড়া আপনি চাইলে টেকেরঘাট বাজারে রাতে থাকতে পারবেন। চাইলে সুনামগঞ্জ এসে সেখানের কোন হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে হাওরে বেড়াতে গেলে অবশ্যই আপনার উচিত হাওরের নৌকায় অন্তত এক রাত থাকার। এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই আপনার ভাল লাগবে। তারপরেও যদি আপনার হোটেল প্রয়োজন হয় এগুলো দেখতে পারেন।

সুনামগঞ্জে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্যে হোটেল ভাড়া পাবেন।

  • হোটেল নূর-পূর্ববাজার, স্টেশন রোড সুনামগঞ্জ
  • হোটেল সারপিনিয়া, জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ।
  • হোটেল নূরানী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, সুনামগঞ্জ।
  • হোটেল মিজান, পূর্ব বাজার, সুনামগঞ্জ।
  • হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড
  • সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট

খাবার ব্যবস্থা

হাউজবোট প্যাকেজ খাবারসহ হয়ে থাকে। তা না হলে নিজেদের খাবার নিজেরা ব্যবস্থা করে নিতে হবে। দিনে দিনে ঘুরে চলে আসলে তাহিরপুরে খাবার হোটেল থেকে রওনা হবার আগে সকালের ও ফিরে আসার পর দুপুরের খাবার হাওরের প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে নিজের পছন্দের মাছ দিয়ে খাবার পর্ব সেরে ফেলতে পারেন। এছাড়া খেতে পারবেন টেকেরঘাটেও।

আর যদি হাওরে রাতে থাকার পরিকল্পনা থাকে এবং নিজেরা রান্না করে খাওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে তাহিরপুর থেকে নৌকায় ওঠার আগে যে কয়দিন অবস্থান করবেন সেই কয়দিনের বাজার করে নিতে পারেন। আর তাজা মাছ কেনার জন্য হাওরের মাঝখানের ছোট বাজারগুলোতে যেতে পারেন। এছাড়া সাথে নিতে পারেন দেশি হাঁস কিংবা শুঁটকি।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ সতর্কতা ও পরামর্শ

  • টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণকালে নৌকায় না থাকলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন।
  • যে কোন কিছুর জন্যে দামাদামি করে নিবেন।
  • একসাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। ৪-৫ জন বা ৮-১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো।
  • কম খরচে বেড়াতে চাইলে ছুটির দিন গুলো পরিহার করুন।
  • হাওরে বজ্রপাত হলে নৌকার ভিতরে অবস্থান করুন।
  • খাবারের অতিরিক্ত অংশ/উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি হাওরের পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
  • উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বা যন্ত্র পরিহার করুন।
  • রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না।
  • টাংগুয়ার মাছ, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি ধরা বা এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে এমন কাজ থেকে বিরিত থাকুন।
  • টাংগুয়ার জলাবনের কোন রুপ ক্ষতিসাধন না করার ব্যপারে সতর্ক থাকুন।
  • ভ্রমণে সাথে নিন
  • টর্চ ব্যাকআপ ব্যাটারিসহ, পাওয়ার ব্যাংক, রেইনকোর্ট বা ছাতা, নিয়মতি সেবনীয় ওষুধ, টয়লেট পেপার, ব্যাগ ঢেকে ফেলার মতো বড় পলিথিন, স্যান্ডেল, সানগ্লাস, ক্যাপ বা হ্যাট, গামছা (যা সহজে শুকাবে), খাবার পানি এবং সহজে শুকায় এমন জামাকাপড়।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post