ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই যা করতে হবে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই যা করতে হবে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই যা করতে হবে

ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) রোগ, যেখানে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এটি তখনই ঘটে যখন শরীর যথাযথ পরিমাণ ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না, বা ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। ইনসুলিন একটি হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় (pancreas) থেকে নিঃসৃত হয় এবং রক্তের গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিসের ধরণ

  1. টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
    • এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে। সাধারণত এটি শৈশব বা কিশোর বয়সে দেখা দেয়।
    • ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
  2. টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
    • এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ এবং সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এখানে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না (ইনসুলিন প্রতিরোধ)।
    • এটি খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা পরিবর্তন এবং ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  3. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস:
    • গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়, যখন শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এটি গর্ভকালীন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
  4. প্রি-ডায়াবেটিস:
    • এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিন্তু ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

লক্ষণ

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • ওজন হ্রাস
  • ক্লান্তি বা অবসাদ
  • ক্ষত সারতে সময় নেওয়া
  • দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া

জটিলতা

  • হৃদরোগ
  • কিডনি বিকল
  • স্নায়ুর ক্ষতি
  • চোখের সমস্যা এবং অন্ধত্ব
  • পায়ের সমস্যা এবং সংক্রমণ

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।

আপনার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য বা পরামর্শ দরকার হলে জানান!

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই যা করতে হবে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই যা করতে হবে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এখনই জরুরি। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব:

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার: শাকসবজি, ফলমূল, ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
  • চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো: মিষ্টি পানীয়, জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত তেল বা লবণযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  • সুষম খাদ্য পরিকল্পনা: প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ নিশ্চিত করুন, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

  • ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং, বা ব্যায়াম করুন।
  • অলসতা কমানো: অফিস বা বাড়িতে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

  • অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক ডায়েট এবং শারীরিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

পর্যাপ্ত ঘুম

  • রাতে পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করুন, কারণ ঘুমের অভাব ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

  • স্ট্রেস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা প্রিয় কাজে সময় দিন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। রক্তে শর্করার মাত্রা, ওজন এবং রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন

  • ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো পরিহার করুন।

পরিবারের ইতিহাস জানা

  • পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে আরও সচেতন থাকুন এবং আগাম সতর্কতা নিন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে নিয়মিত অভ্যাসগুলোর পরিবর্তনই বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সময় থাকতেই এসব অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

ড্যাশ ডায়েট

ডায়াবেটিস মোকাবিলায় ড্যাশ ডায়েট!

রক্তে শর্করার মাত্রা (ডায়াবেটিস) একবার বেড়ে গেলেই হল! নিয়ন্ত্রণে আনতে কালঘাম ছুটে যায়। নিয়মমাফিক রুটিন মেনে, ওষুধ খেয়েও অনেক সময় দেখা যায়, সুগার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এখন উপায়?

সমাধান অবশ্যই আছে। শীতকাল আসছে। আর শীতকাল মানেই হরেক রকম শাকসব্জি ও ফলের মেলা বাজারজুড়ে। তেমনই বেশ কয়েকটি দিয়ে শুরু করুন ড্যাশ ডায়েট। ফাইবার ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ এই ডায়েট সুগারের রোগীদের জন্য আদর্শ। 

ড্যাশ ডায়েট কি?

‘ড্যাশ’-এর পুরো কথা ‘ডায়টারি অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন’। এটি মূলত ফাইবার ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ। আধ কাপ কাঁচা অথবা সেদ্ধ সব্জি, আধ কাপ টাটকা সব্জির রস, আধ কাপ ড্রাই ফ্রুটস, আধ কাপ টাটকা ফল— দিনের যে কোনও সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই চারটি জিনিস খাওয়াই হল ড্যাশ ডায়েট।

সুগারের জন্য আর্টারি, ব্লাড ভেসেল ও হৃদযন্ত্রের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। এই ডায়েট ফর্মুলা মেনে চললে, এই সমস্যাগুলি থেকে উপকার পাবেন আপনি। ড্যাশ ডায়েট কোনও পূর্ণ খাদ্যতালিকা নয়। আপনি দৈনন্দিন জীবনে যে খাবার খান, তার পাশাপাশি এই ডায়েট মেনে চলতে পারেন। এর ফলে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ অনেকটা কমে যায়। 

 ড্যাশ ডায়েটের চার ধাপ

প্রথম ধাপে খেতে হবে কাঁচা বা রান্না করা সব্জি। এক্ষেত্রে শীতকালীন যে কোনও সব্জি খেতে পারেন। যেমন গাজর, বিট, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, বিনস, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো। পাশাপাশি রসুন, পেঁয়াজ, আদা এগুলিও খান। যে কোনও প্রাকৃতিকভাবে রঙিন সব্জি উপকারী। সুগারের পেশেন্টদের চোখের সমস্যাতেও ভুগতে হয়।

তাঁদের জন্য কাঁচা গাজর খুব উপকারী। কারণ গাজর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। কুমড়ো ও তার বীজও খেতে পারেন। এটিও মাল্টি মিনারেল ও মাল্টি ভিটামিন সমৃদ্ধ। এছাড়াও লেটুস, সেলারি খাওয়া যায়। 

দ্বিতীয় ধাপে সব্জির রস করে খেতে হবে। উচ্ছে, করলা ইত্যাদির রস খাওয়া ভীষণ উপকারী ডায়াবেটিকদের জন্য। এছাড়া গাজর, টম্যাটো, বিটের রস খেতে পারেন। পালং শাক, মেথি শাকের রস খাওয়াও ভালো। যে কোনও মাধ্যমেই মেথি (গুঁড়ো, শাক, গোটা) উপকারী। 

তৃতীয় ধাপে খান ড্রাই ফ্রুটস। যেমন বাদাম, আখরোট, আমন্ড। খেজুর, কিশমিশ এগুলি এড়িয়ে চলুন।

চতুর্থ ধাপে ফল খেতে হবে। গোটা ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশি উপকারী। কারণ তাতে ফাইবার পাওয়া যায়। স্মুদি বানিয়েও খেতে পারেন। যে কোনও ধরনের বেরি (ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি) সুগারের রোগীদের জন্য আদর্শ। জাম সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শীতকালে আমলকীও সুগারের জন্য খুব সাহায্য করে।

ব্রেকফাস্টের টেবিলে ডায়বেটিক পেশেন্ট যদি রোজ একটুকরো আমলকী এবং এক টুকরো কাঁচা  হলুদ খান, তাঁর ওজন যেমন কমবে তেমনই লিভার বা কিডনির সমস্যারও সমাধান হবে।

ডায়বেটিক রোগীদের ক্রনিক ইনফেকশনের সমস্যা থাকে। তার জন্যও এটা খুব উপকারী। যদি কোনও রোগী অভিযোগ করেন, খেতে পারছেন না, তাহলে আমলকী ও হলুদের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মেশানো যেতেই পারে।

এছাড়াও বাতাবিলেবু, কমলালেবু, মুসাম্বিলেবু, ডাঁসা পেয়ারা, আপেল, কলা খেতে পারেন। কমলা, মুসাম্বিতে একটু মিষ্টি আছে ঠিকই, কিন্তু সেটা তেমন ক্ষতি করে না। অল্প করে আঙুর খাওয়াও যায়। 

 কীভাবে খাবেন? 

যে সব্জিগুলি কাঁচা খেতে পারবেন, সেগুলি কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব না হলে সেদ্ধ করে খান। অলিভ অয়েলে সামান্য ভেজে দারচিনি ছিটিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে ব্রেকফাস্টে ডিমের মধ্যে সব্জি দিয়েও খেয়ে থাকেন। সেটিও উপকারী। ফল খেতে পারেন দুপুরের খাওয়ার পর।

সুগারের রোগীরা খাওয়ার পর অনেক সময় মিষ্টি খেতে চান। চেষ্টা করুন খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে তাঁদের জল দিতে। এই ফাঁকে তাঁদের আপেল ও পেয়ারা দিতে পারেন। এতে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেটা কমবে। 

 কোন কোন শাকসব্জি ও ফল এড়িয়ে চলবেন

বেশ কিছু শাকসব্জি ও ফল সুগারের রোগীদের এড়িয়ে চলাই উচিত। লিচু, আখ, চেরি, আনারস, আম এগুলি খাবেন না। আবার আলু, ভুট্টা এগুলিও খুব ক্ষতিকর।  মূলত যাঁরা ডায়াবেটিক নন, তাঁরা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলেও শরীরে থাকা ইনসুলিন মেটাবলিজ করতে পারে। সেই জন্য সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের তা হচ্ছে না।

এর ফলে মাল্টিঅর্গান ড্যামেজের মতো সমস্যা তাঁদের হয়। আরেকটা কথা মাথায় রাখাও প্রয়োজন। গ্লুকোজ ছাড়া কারও চলবে না। কারণ আমাদের দেহের কোষগুলি কেবল গ্লুকোজই খায়। আমাদের এমন ধরনের খাবার বেছে নিতে হবে, যার ফলে অল্প অল্প করে গ্লুকোজ লেভেল বাড়বে। 

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post